গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষনই যেন এক কালবেলা…


এ মুহূর্তে বাংলাদেশে একটি খুব আলোচিত একটি ঘটনা হচ্ছে শিশু রাকিব হত্যা। নৃশংস বর্বর এ ঘটনা মানুষকে স্তব্ধ করে দিয়েছে অথচ মাত্র কিছুদিন পূর্বেই আমরা কেঁপে উঠেছিলাম শিশু রাজনের লোমহর্ষক হত্যা কান্ডের ঘটনায়। খুব কম সময়ের মধ্যে পরপর এরকম বেশ কিছু হত্যা কান্ড অতঃপর পত্রপত্রিকায় তার নিউজ, ইন্টারনেট, টিভি তে আলোচনা, প্রতিক্রিয়া দেখে আমাদের মনে হতে পারে হঠাৎ বুঝি এ ধরনের ঘটনা ব্যপক ভাবে শুরু হয়েছে। আসলে মোটেও তা নয় বরং এটাই এখন এ দেশের, এই সমাজের বাস্তব চিত্র। খুব অল্প সংখ্যক ঘটনাই মিডিয়াতে আসে এবং মানুষ তা জানতে পারে অথচ প্রতিদিনই এমনই অনেক নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটে চলেছে। রাজন হত্যার দু দিন পর চত্তগ্রামে চান্দগা আবাসিক এলাকায় মামার হাতে খুব নিষ্ঠুরভাবে হত্যা হয় ভাগ্নের যা মিডিয়ায় সেভাবে আসেনি। পত্রিকার বরাত দিয়েই জানা যায় এ বছর জানুয়ারী থেকে জুন পর্যন্ত ছয়মাসে সারা দেশে পিটুনিতে মারা গিয়েছে ৬৯ জন। গড়ে এক মাসে প্রায় ১২ জন। এ কেবল পত্রিকা কর্তৃক লিপিবদ্ধ তথ্য; বাস্তবতা আরো ভয়ানক।আরো একটা বিষয় খুবই ভয়ানক তা হলো হত্যার ধরন এবং হত্যাকারীদের প্রকৃতি। নৃশংসতা আর বর্বরতার প্রতিযোগিতায় যেন নেমেছে মানুষ! আর হত্যাকারীদের তালিকায় এখন হার হামেশাই যোগ হচ্ছে নিজস্ব আত্মীয়- বাবা, মা, মামা, চাচা এবং সাধারণ মানুষ যাদের এ ধরনের কোন ক্রিমিনাল রেকর্ডই নেই। একটি দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা যদি দিন দিন এমন অবস্থার দিকে যেতে থাকে তাহলে বলতেই হয় ধ্বংসের প্রান্ত সীমানায় পৌছে গেছে এ জনপদ। নিজ পিতা যখন তার তিনটি কন্যা সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করে (১৬.০৫.২০১৫), জনগণের রক্ষক সেজে যখন ভক্ষক হয়ে শিশু সাইদ কে হত্যা করা হয় (১৮.০৩.২০১৫), পিটিয়ে খুচিয়ে শিশু রাজনকে (১২.০৭.২০১৫), পায়ুপথে কম্প্রেসার লাগিয়ে যখন শিশু রাকিব কে হত্যা করা হয় (০৫.০৮.২০১৫) তখন আসলেই বলতে হয় দেউলিয়া হয়ে গেছে এ সমাজ… এ যেন এক কালবেলা! 

কিন্তু কেন এই হত্যার মিছিল? কেন ছাত্রদলের গুলাগুলিতে বাবার কোলে বসে থাকা দু বছরের নওশীনের জীবনের প্রদীপ নিভে যায়।কেন ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের গুলাগুলিতে মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ হয় শিশু… কেন এসব অমানবিকতা, পাশবিকতা? কারণ কি শুধু এটা যে আমরা আমাদের মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছি, হয়ে গেছি চিন্তাশুন্য কিংবা আমাদের মানবিক মুল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে ইত্যাদি। আসলে এগুলো কারণ নয় বরং এগুলোও ফলাফল।মূলত এর পেছনে রয়েছে একটি ঘুনে ধরা সভ্যতা, একটি অনাদর্শিক সমাজব্যবস্থা, ভোগবাদী চরম স্বার্থবাদী আর সস্তা ও নষ্ট আবেগের সংস্কৃতি, সর্বোপরি একটি মানব রচিত মতবাদপুষ্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা।যার অবধারিত ফলাফল আর ফলাফলের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এই হত্যা ধ্বংসের নারকীয় মিছিল! 

পথ কী? পাথেয় কোথায়? কেবল এবং কেবলমাত্র একটি আদর্শিক সমাজ ব্যবস্থাই পারে মানুষ কে মুক্তি দিতে। আর আদর্শিক সমাজের পূর্বশর্ত একটি আদর্শিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা।আর সেই একমাত্র আদর্শটি হলো ইসলাম আর রাষ্ট্রটি হলো খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থা।একজন খলীফা আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ব্যবস্থা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং হক ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলেন। মানুষ সঠিক চিন্তা, আবেগ, মানবিক মুল্যবোধ ও দায়িত্ত্বশীলতা নিয়ে জীবন ধারণ করে।ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মুসলিম, অমুসলিম নির্বিশেষে সকল মানুষ পায় সঠিক নিরাপত্তা। ইসলামে অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী দেয়া হয়েছে- “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে একজন মানুষ কে হত্যা করল সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল” [সুরা মায়িদা: ৩২]। 

শিশু হত্যা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যতম অপরাধ এমনকি শিশুটি যদি মুশরিক পরিবারেরও হয়। এক যুদ্ধে মুশরিকদের একটি শিশু নিহত হলে রাসুল (সা) তা শুনে খুব মর্মাহত হন। তিনি বলেন- “এ শিশুরা তোমাদের চেয়েও উত্তম। সাবধান! শিশুদের হত্যা করবে না!” [মুসতাদরাকে হাকিম: ২/১৩৩]। 

বাংলাদেশে এখন মাতৃজঠরেও শিশু নিরাপদ নয়। অথচ ইসলাম এ ব্যপারে কত সচেতন। একবার এক ব্যাভিচারিনী মহিলা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিজেকে গর্ভবতী উল্লেখ করলে তার গর্ভস্থ নিরপরাধ শিশুর নিরাপদ প্রসব এবং দুগ্ধকালীন সময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত দন্ড কার্যকর করেন নি। [মিশকাত: ২/৩১০]। 

ইসলামী রাষ্ট্র শিশুদের জন্য হবে স্বর্গ রাজ্য। আমাদের প্রিয় রাসূল (সা) শিশুদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তারা তাঁর সাথে রাস্তার ধুলোয় খেলতো। রাসুল (সা) শিশুদের যত্ন নিতে বলেছেন। ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থা কতটা দায়িত্বশীল সকলের নিরাপত্তা আর অধিকারের ব্যপারে তা ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক খলীফা ওমর (রা) থেকে বুঝা যায়- “যদি এই ফোরাত নদীর তীরে যদি একটি বকরি পা পিছলে পড়ে মারা যায় আমি ওমর ভয় করি আল্লাহ’র কাছে আমাকে এর জবাবদিহি করতে হবে”। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! 

পুঁজিবাদী ভোগবাদী ব্যবস্থার কম্প্রেসারের বিষবাস্পে ফুলে উঠা মৃতপ্রায় এই কুফরি সভ্যতার পতন ঘটিয়ে শীঘ্রই ফিরে আসবে মানবতার মুক্তির দিশারী ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থা। সর্ব দিকে, সপ্ত সুরে আজ কেবলি তার আগমনি ধ্বনি… আর এর জন্য আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার জন্য ঝাপিয়ে পড়তে হবে। আর এ কাজটি আমাদের উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয দায়িত্ব। 

“তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হবে”। [বুখারী: ১/৩০৪ ও মুসলিম: ৬/৭] 

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে এই মহান দায়িত্ত্ব পালন করার তৌফিক দিন। আমীন। 


রবিউল আলম

0 comments: